সমস্ত লেখাগুলি

উঁচু জাত-নিচু জাত -
জামাল আনসারী
Nov. 21, 2024 | অনুগল্প | views:993 | likes:0 | share: 0 | comments:0

“কতবার তোকে বলেছি না, নিচু জাতের ছেলের সাথে খেলবি না। নিচু জাতের ছেলেকে ঘরে ঢুকাবি না। কোন কথায় তোর কানে ঢোকে না। এরপর যদি কোনদিন তোকে ওর সাথে খেলতে দেখেছি তো তোকে মেরে ফেলবো।”―ছেলেকে মারতে মারতে এক নিশ্বাসে এত কথা বলে ফেলল শ্রীদেবী।

 ছেলেটি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,আমি ভুল করেছি মা। আর কোনদিন নিচু জাতের ছেলের সাথে খেলবো না। এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দাও।

ঠিক আছে। ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু কথাটা যেন তোর মনে থাকে।―শ্রীদেবী ধমকের সুরে জানিয়ে দেয়।

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ছেলেটি স্কুলে চলে যায়। নিচু জাতের ছেলেটিও সেই স্কুলে পড়ে। তারই অন্তরঙ্গ সহপাঠী। প্রতিদিন তারা একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসে।স্কুলে পরস্পর পরস্পরের সাথে দেখা হয় কিন্তু উঁচু জাতের ছেলেটি তাঁর মায়ের কাছে তুচ্ছ অজুহাতে মার খাওয়ার ভয়ে আর কথা বলে না।কিছু কিছু বাবা মা শিশুদের সহজ সরল নিষ্কলঙ্ক মনে বিদ্বেষ, ঘৃণার বিষ মস্তিষ্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুচারুভাবে বপন করে দেয়।

 কিছুক্ষণ পরে ক্লাসে ইতিহাসে শিক্ষক পড়ায়, "জাতিভেদ প্রথা সমাজের কলঙ্ক ।কোন জাতিই নিচু নয়,আবার জাতিই উঁচু নয়।― সব সমান। আমরা সবাই মানুষ। কোন জাতিকে ছোটজাত বলে অপমান করা সামাজিক অপরাধ। আমরা কেউই আজ থেকে আর জাতিভেদ মানবো না। সবাইকে মানুষ বলে মানবো।"

 ঢং ঢং করে ঘন্টার আওয়াজ জানিয়ে দেয় ইতিহাস ক্লাসের সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।...

দেশপ্রেম ও কিছু কথা -
জামাল আনসারী
Nov. 21, 2024 | রাজনীতি | views:735 | likes:2 | share: 2 | comments:0

বর্তমানে আমাদের দেশে দেশপ্রেমেরের জোয়ার বইছে। অভুক্ত শরীরেও দেশপ্রেম টগবগ করে ফুটছে।

কিন্তু দেশপ্রেম কি?

তা হইতো অনেকেই জানেন না।দেশপ্রেম বলতে শুধুই দেশের প্রতি প্রেম বোঝায় না,  দেশের মানুষের প্রতি প্রেমও বোঝায়।

 দেশ যদি ভালোবাসার মতো কাজ করে, তবে দেশের মানুষ আপনা আপনি দেশকে ভালোবাসবে। কাউকে জোর করে বলার দরকার নেই,  দেশকে ভালোবাসো, দেশকে ভালোবাসো।

কিন্তু ভারত সরকার থুড়ি মোদীর সরকার দেশের জনগনকে এখন ঘাড় ধরে দেশপ্রেমের পাঠ শেখাতে নেমেছে। আর এখানেই দেশের বহুত্ববাদের সঙ্গে বিরোধ বাঁধছে। মোদীর সরকার যা বলছে তা ভুল হলেও ঠিক বলে চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে হবে,  নইলে আপনাকে দেশদ্রোহী,  বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে ছাপ মেরে দেবে।তারপর যা ঘটে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

 ভারত সরকার ও মোদী সরকার এখন সমার্থক হয়ে উঠেছে। সরকার  দেশপ্রেমের নামে উগ্র হিন্দু তালিবানী শাসন চালু করতে চাইছে। যা ভারতের মতো ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে যথেষ্ট চিন্তার বিষয় বটে।তাই সাধারণ শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের এখনই এই স্বৈরাচারী শাসনের উপরে প্রতিবাদ না জানালে, আগামী দিনে হয়তো চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছু উপায় থাকবে না।

 

দেশ জুড়ে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদের চাপে ও গৈরিক বাহিনীর ভয়ে দেশের এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে সামরিক সাঁজোয়া গাড়ি  মোতায়েন থাকবে, যা দেখে ছাত্র ছাত্রীদের মনের মধ্যে দেশপ্রেমেরের বাতাবরণ তৈরি হবে। কিন্তু এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। যেহেতু জোর করে মানুষের মনে দেশপ্রেম কখনও জাগানো যায় না।

 মাদ্রাজ হাই কোর্টের মহামান্য বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন যে,  দেশের স্কুল, কলেজ, অফিসে এখন থেকে "বন্দে মাতরম" গানটি বাধ্যতামূলক ভাবে গাইতে হবে। কিন্তু এর ফলে কি দেশপ্রেম বাড়বে? তা হইতো আগামী দিনে বোঝা যাবে।তবে দেশের শাসন বিভাগের নির্দেশে বিচার বিভাগ অতি সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ফলে জন সাধাণের চিন্তা বাড়ছে বলে মনে হয়।

 

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতো মানুষকে যেভাবে দেশের সরকার পদে পদে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে, অপমান করছে।সেটা মোটেই ভালো লক্ষণ নই। দেশ এক ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

 দেশের এক ভণ্ড যোগগুরু তো প্রকাশ্য সমাবেশে হুমকি দিচ্ছে, "ভারত মাতা কি জয়" না বললে মুণ্ডু কেটে নেওয়া হবে।এটাই কি দেশপ্রেম এর স্বরূপ? এগুলো কি মেনে নেওয়া যায়?

এখন তো আবার একটি নিরীহ পশুকে নিয়ে দেশের সরকার যেভাবে মেতে উঠেছে, তা দেশের মানুষের কাছে যথেষ্ট চিন্তার বিষয়ই বটে। মোদী রাজে  যেখানে সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা বেড়েই চলেছে।মানুষের জীবনের চেয়ে এই পশুটি এখন মহা মূল্যবান হয়ে উঠেছে। এই পশুটিই বর্তমানে মোদী সরকারের রাজনৈতিক প্রানী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরুর জন্য মানুষকে প্রতিনিয়ত খুন বা গনধোলাই এর শিকার হতে হচ্ছে। এরকম দেশপ্রেম আমরা চাই না।যে দেশপ্রেম মানুষের থেকে পশুকে মূল্যবান মনে করে।

এই মেকি দেশপ্রেমেরের প্রতিবাদ চাই। তাই দেশের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের কাছে অনুরোধ করবো,  দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষ কে বাঁচাতে, দেশের গনতন্ত্র কে প্রতিষ্ঠা করতে, দেশের বহুত্ববাদকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে।

দেশের আইন কি মাকড়সা জলের মতো?? -
জামাল আনসারী
Nov. 19, 2024 | আইন | views:44 | likes:2 | share: 2 | comments:0

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয় মাকড়সা জাল দেখেছো। কি সুন্দর বুনন! তাই না। কিন্তু এই জাল হল ছোট ছোট পোকা- মাকড় ধরার ফাঁদ। জালের সংস্পর্শে কোনো ছোট পোকা এলেই সেই জালে জড়িয়ে পড়ে। আর যদি একবার জালে আটকে যায়, তাহলে  পোকার চৌদ্দ গুষ্টির সাধ্য নেই, সেই অতিসূক্ষ জালের তীব্র আকর্ষণ  ছিন্ন করে,পালিয়ে বাঁচে। তবে মজার ব্যাপার হলো এই যে, মাকড়সা জালে কখনও কোনো হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক, আটকে পড়ে না। কারন তাঁরা তাদের পেশী শক্তি দ্বারা অতি সহজেই জালের বন্ধন ছিন্ন করে,অবাধে,নির্ভয়ে বিচরণ করতে পারে।


দেশের আইন হচ্ছে অনেকটা মাকড়সার জালের মতো।ছোট্ট কিছু পড়লে আটকে যায়, কিন্তু বড়ো কিছু জালে পড়লে জাল ছিঁড়ে ঠিকই বেরিয়ে আসে।তাই দেশের আইন দিয়ে খেটে খাওয়া, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত,গরীব মানুষ গুলোকে বিনা বিচারে, বিচারের নামে প্রহসনে দিনের পর দিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।কিন্তু ললিত মোদি, নীরব মোদি,বিজয় মালিয়ার মতো  মহান দেশপ্রেমিক(!) মানুষরা সেই আইনের জাল ছিঁড়ে অনায়াসে বেরিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারে। দেশের আইন, আদালত, বিচার ব্যবস্থা,CBI সম্মিলিত ভাবে চেষ্টা করেও পালিয়ে যাওয়া  ধনকুবের, শিল্পপতিদের টিকি পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারেন না। কেন??একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই সহজেই বুঝতে পারবে, নেতা, মন্ত্রীরা হাজার অন্যায়- অত্যাচার, দুর্নীতি, খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি করলেও পেশী শক্তি দ্বারা  ওই আইন নামক মাকড়সা জাল ছিঁড়ে ঠিকই বেরিয়ে যায়। 


এক বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনের আগে একশো ত্রিশ কোটি মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সরকার গঠন করলে, বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা দেশে নিয়ে এসে দেশের কোটি মানুষের উন্নয়ন করবে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি যে ক্রমশ রসাতলে যেতে বসেছে, তবুও বিদেশের একটিও কালো টাকা কি দেশে এসে পৌঁচেছে। না পৌঁছে নি। আর  কোনোদিনই ঐ কালো টাকা দেশে আনার কোনো ব্যবস্থায় নেওয়া হবে না। কারন সেই কালো টাকার মালিক তো আর গরিব নয়। সব  ধনকুবের, শিল্পপতি, নেতা, মন্ত্রীদের টাকা। সে হোক না কালো টাকা। তাতে কি! ঐ যে আগেই বলেছি।দেশের আইন নামক মাকড়সা জালে তারা কোনোদিনই আটকে পড়ে না। তারা আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। 


দেশের আইন তাদের জন্য নয়। দেশের আইন গরিব মানুষের জন্য...গরিব মানুষদের মারার জন্য...

মিলিয়ে দেখবে কোনো গরিব চাষি ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া মাত্র হাজার দশের টাকা ঋণ পরিশোধ করতে না পারার জন্য জেল খাটতে বাধ্য হয়।কিন্তু ললিত মোদি, নীরব মোদি, বিজয় মালিয়া... এদের কত হাজার কোটি টাকা ভারতীয় ব্যাঙ্কে ঋণ আছে!! এখনও সেই টাকা কেউ পরিশোধ করে নি।তবুও তাদের জেল হয় না। কেন??

যারা হাজার কোটি টাকা চুরি করে আছে তাদের জেল হয় না, কিন্তু কোনো মানুষ না খেতে পেয়ে দোকানে সামান্য রুটি চুরি করার অপধধে জেল হয়।

আবার সবাই বলে দেশের আইন নাকি সবার জন্য সমান ! কোন মানদণ্ডে দেশের আইন সবার জন্য সমান তা আজও আমার মাথায় ঢোকে নি।

(বিঃ দ্র: আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আমার পূর্ন আস্থা আছে)

মানুষ বড় না ধর্ম বড়? -
জামাল আনসারী
Nov. 18, 2024 | ধর্ম | views:886 | likes:2 | share: 2 | comments:0

সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের কুমিল্লায় একটি মন্দিরে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করা হয়েছে বলে কি ঘটনায় না ঘটল। হাজার হাজার উন্মুক্ত উগ্রবাদী মানুষ কয়েকদিন ধরে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনি, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা চালাল, কয়েকটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ এর ঘটনা ঘটল,এমনকি দাঙ্গায় কয়েকজন নিরহী মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা তো ছেড়েই দিলাম কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ছোট বড় মাঝারি নিউজ চ্যানেল এবং সংবাদপত্রের শিরোনামের কল্যানে গোটা বিশ্ববাসীর জানতে আর বাকি রইল না, যে কেন গোটা বাংলাদেশ জুড়ে এমন অভাবনীয় অনভিপ্রেত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

        এই সব কান্ডকারখানা দেখে শুনে আপনার কি মনে হয় না যে, মানুষ বড় না ধর্ম বড়? একজন ধর্মান্ধ গোঁড়া আপাদমস্তক ধর্ম ব্যবসায়ী ব্যক্তির নিকট অবশ্যই তার নিজের ধর্ম বড়। কিন্তু যারা শিক্ষিত, প্রগতিশীল, যুক্তিবাদী, মানবদরদী, মানবতাবাদী, নাস্তিক, তারা কখনও ধর্মকে মানুষের উপরে স্থান দিতে পারে না। 


মানুষ তার বুদ্ধিমত্তার জোরে প্রমান করেছে মানুষই এই পৃথিবীর একমাত্র শ্রেষ্ঠ জীব। সেই মানুষই মাঝে মধ্যে উগ্র হয়ে ওঠে, প্রচন্ড হিংস্র হয়ে ওঠে। কারন মানুষ অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। 

আজ থেকে কয়েক শতাব্দী আগে কবি বড়ু চণ্ডীদাস বলে গেছেন; মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণী―

"সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। 

মধ্যযুগে বসে বাংলারই এক কবি সমগ্র বিশ্বের জাতিকে শুনিয়েছেন বিশ্ব মানবতার অমর কবিতা। যেখানে কোনো ঈশ্বর-আল্লা-গড-ভগবান নয়, মানুষেরই স্থান সবথেকে উপরে। মানুষই বড়। মানুষের থেকে কোনো কিছুই বড় হতে পারে না।

 

           আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার সাম্যবাদী কবিতায় সব ধর্মের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে মানবতার জয়গান গেয়েছেন। তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, এই ভাবে―"গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।"

নজরুল ছিলেন সব ধর্মীয় চেতনার ঊর্ধ্বে। অন্তরে তিনি না ছিলেন হিন্দু না ছিলেন মুসলিম। ‘তিনি সবার ঊর্ধ্বে ছিলেন মানবতার কবি। "জাতের বজ্জাতি" কবিতায় তিনি ধর্ম ব্যবসায়ীদের সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বলছেন―

জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া,

ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া।

হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়ি – ভাবলি এতেই জাতির জান,

তাইত বেকুব, করলি তোরা এক জাতিকে একশ’-খান।

এখন দেখিস ভারত জোড়া পঁচে আছিস বাসি মড়া,

মানুষ নাই আজ, আছে শুধু জাত-শেয়ালের হুক্কাহুয়া।


যে জাত-ধর্ম ঠুনকো এত, আজ নয় কা’ল ভাঙবে সে ত,

যাক্ না সে জাত জাহান্নামে, রইবে মানুষ, নাই পরোয়া।"

নজরুলের স্পষ্ট উক্তি জাত, ধর্ম লুপ্ত হয়ে গেলেও এই পৃথিবীর মানুষের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না। হাজার খানেক জাত, হাজার খানেক ধর্মের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কোনো দরকার নেই। ধর্ম ছাড়াও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকা যায়। দুঃখের বিষয় হলেও একথা সত্যি যে, আমাদের দেশে নজরুল ইসলামের লেখার যথাযথ মূল্যায়ন এখনও পর্যন্ত হয়নি।

       আমরা লেখাপড়া শিখি। বিদ্যা বুদ্ধি অর্জন করি। কিন্তু সেই অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগায় না। বিখ্যাত দার্শনিক ও রসায়নবিদ আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় আক্ষেপ করে বলেছিলেন―"আমি ক্লাসে এত করিয়া ছাত্রদের পড়াইলাম, যে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপরে পড়িয়া চন্দ্রগ্রহণ হয়। তাহারা তা পড়িল, লিখিল, নম্বর পাইল, পাস করিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হইল যখন আবার সত্যি সত্যি চন্দ্রগ্রহণ হইল তখন চন্দ্রকে রাহু গ্রাস করিয়াছে বলিয়া তাহারা ঢাক, করতাল, শঙ্খ লইয়া রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িল। ইহা এক আশ্চর্য ভারতবর্ষ।"

       আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের উপলব্ধিতে কোনো ভুল ছিল না। আমরা ক্লাসে শিখি এক, আর প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহার করি আরেক। সেটাই হল বর্তমান শিক্ষিত যুব সমাজের অন্যতম দুর্বলতা। সেই দুর্বলতার সুযোগে ধর্মান্ধ উগ্রবাদ শুধু এপার বাংলা ওপার বাংলায় সীমাবদ্ধ নয়, গোটা বিশ্বের কোনায় কোনায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কবি কালিদাস তার কবিতায় মানুষেরই জয় ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন―

        "মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে করে দেবমহিমা নির্ভর। "কবি কালিদাস রাযের উক্তিকে বর্তমানের শিক্ষা দীক্ষা, সভ্যতায় এগিয়ে থাকা মানুষজন বোধহয় কেউই অযৌক্তিক বলে এড়িয়ে যেতে পারবে না। এমন কি বড় বড় ধর্মগুরুরা পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, কবির উক্ত বক্তব্য অতিরঞ্জিত নয়। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? হিংসার ঘটনাই বা ঘটছে কেন?

          ধর্ম নিয়ে কেন এতো টানাটানি? ধর্ম নিয়ে মারামারি কাটাকাটি লড়াই ঝগড়ার অন্ত নেই। আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে সংঘর্ষে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার সিংহভাগ মৃত্যু হয়েছে ধর্মের কারনে। ধর্মকে যখনই মানুষের উপরের স্থানে বসানোর চেষ্টা হয়েছে তখনই বিশ্ব সাক্ষী থেকেছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের। ধর্মের কারনে কত গ্রাম, কত নগর, কত জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার 'গোরা’ উপন্যাসে ধর্ম প্রসঙ্গে বলেছেন―"একটা বিড়াল পাতের কাছে এসে ভাত খেলে কোনও দোষ হয় না, অথচ একজন মানুষ সে ঘরে প্রবেশ করলে ভাত ফেলে দিতে হয়। মানুষের প্রতি মানুষের এমন অপমান এবং ঘৃনা যে জাতিভেদে জন্মায় সেটাকে অধর্ম না বলে কি বলব? মানুষকে যারা এমন অবজ্ঞা করতে পারে, তারা কখনোই পৃথীবিতে বড়ো হতে পারে না। অন্যের অবজ্ঞা তাদের সইতেই হবে।"

        এই পৃথিবীতে এমন মানুষেই সংখ্যায় বেশি যারা ধর্মের নামে অধর্মের কাজই বেশি করে। সে জ্ঞাত ভাবেই হোক বা অজ্ঞাতসারেই হোক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'ধর্মমোহ' নামক অবিস্মরণীয় একটি কবিতায় সমগ্র মানব জাতিকে সতর্ক করে বলেছেন যে―"ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে/ অন্ধ সে জন শুধু মারে আর মরে।"

রবি ঠাকুরের সেই অমর বাণীকে তোয়াক্কা না করে লক্ষ লক্ষ ধর্মান্ধ নিজের নিজের ধর্মকে রক্ষা করতে মারামারি কাটাকাটি করে গোটা বিশ্বের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত, বিষাক্ত করে তুলছে। কবে তারা বুঝবে মানুষের জীবনের চেয়ে ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থ বড় হতে পারে না! কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থের ''মানুষ' কবিতায় লিখে গেছেন―

"মানুষেরে ঘৃণা করি’

ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি’ মরি!

ও’ মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ’ নাও জোর ক’রে কেড়ে,

যাহারা আনিল গ্রন্থ’-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে,

পূজিছে গ্রন্থ’ ভন্ডের দল! ―মূর্খরা সব শোনো,

মানুষ এনেছে গ্রন্থ’; ―গ্রন্থ’ আনেনি মানুষ কোনো।"

          পৃথিবীর সমগ্র মানুষ যেদিন বুঝতে পারবে কোনো ধর্ম নয়, ধর্ম থেকে মানুষ বড়। সেদিনই ধর্ম নিয়ে হানাহানি, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতি ঘটবে। সর্বকালের সেরা মানবদরদী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায় একটি উক্তি দিয়ে এই লেখা শেষ করছি― “সমস্ত ধর্মই মিথ্যা,―আদিম যুগের কুসংস্কার। বিশ্বমানবতার এতবড় পরম শত্রু আর নেই।”

এক-এ চন্দ্র, দুই-এ পক্ষ -
জামাল আনসারী
Nov. 18, 2024 | সচেতনতা | views:286 | likes:1 | share: 0 | comments:0

একটি শিশুর প্রথম লেখাপড়ার হাতেখড়ি বর্ণ পরিচয়। সাথে সাথে শিশুটি বিভিন্ন সংখ্যা গোনা শিখতে থাকে।এ গুলো শিশুর সহজ সরল কোমল মনে এবং বিশ্বাসে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। এই বর্ণ পরিচয় ও বিভিন্ন সংখ্যা গোনার সময় থেকেই জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে শিশুর মনে কিছু আজগুবি, অবিশ্বাস্য, পৌরাণিক ধর্মীয় কুসংস্কারের ধ্যান ধারণা মস্তিষ্কের রন্ধে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আসুন আমরা খোলামেলা মনে সেগুলো আলোচনা দেখি-

১- এক- এ চন্দ্র।চন্দ্র মানে চাঁদ। আমরা সকলেই জানি আমাদের পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হল চাঁদ। তাহলে এক-এ চন্দ্র বলতে একটি চাঁদকে বোঝাচ্ছে। এটা ঠিক আছে। কোনো ভুল নেই।

২- দুই-এ পক্ষ। পক্ষ মানে এখানে কোনো বর পক্ষ বা কনে পক্ষের কথা বলা হয়নি,শত্রুপক্ষ, মিত্রপক্ষ নয় ।বাংলা অভিধানে পক্ষ শব্দের অর্থ দেওয়া আছে “চাঁদের বৃদ্ধিকাল বা হ্রাসকাল (শুক্লপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ); প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা বা অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত সময়; মাসার্ধ, পনেরো দিন (তিনি এক পক্ষকাল বিদেশে থাকবেন)।”

এখানে দুই-এ পক্ষ বলতে  মাসের দুটি (মাসার্ধ)পক্ষকে বোঝানো হয়েছে। এই পক্ষ দুটি হল কৃষ্ণপক্ষ এবং শুক্লপক্ষ।

৩-তিন-এ নেত্র। নেত্র শব্দের অর্থ সংসদ বাংলা অভিধানে লেখা আছে চক্ষু।

এখন তিন-এ নেত্র বলতে এখানে তিনটি চক্ষুর কথা বলা হয়েছে। সমস্যাটি এখানেই।গোটা বিশ্ব তন্ন তন্ন করে খোঁজ করলেও কোনো মানুষ তো দূরের কথা। গরু, ছাগল, হাঁস মুরগী, কোনো পশু পাখির মধ্যে কারোও তিনটি চোখ খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে আজগুবি, অবিশ্বাস্য, গল্পের গরু গাছে চড়ে মার্কা পৌরাণিক গল্প গুলো টেনে আনা হয়েছে। পৌরাণিক গালগল্পে আছে পৃথিবীর যতসব আষাঢ়ে গল্প গুলোর আঁতুরকুড়। পুরানেই পাওয়া যায় কারো জন্ম মাথা থেকে তো কারো জন্ম পা থেকে। কেউ উরু থেকে, কেউ আবার বাহু থেকে জন্ম গ্রহন করে। যতসব হাস্যকর অবৈজ্ঞানিক কান্ডকারখানা! এমন কি চোখের জল থেকে; কান থেকেও মানুষের জন্ম হওয়ার কথা পুরানে লেখা আছে। সেই পৌরাণিক কাহিনীতে শিবের তিনটি চোখের কথা বলা আছে। তাছাড়া কিছু পুরানে দুর্গার তিনটি চোখের কথা বলা হয়েছে। এটা নিয়েও নানা মুনির নানা মত। বির্তকিত বিষয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে শিশু মনে কেন এই অবৈজ্ঞানিক, বিতর্কিত বিষয় গুলো ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এর উদ্দেশ্যই বা কি তা পাঠকদের ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।

৪- চার এ বেদ। আমরা জানি বৈদিক যুগে চারটি বেদ ছিল। এই চারটি বেদ হল- 1) ঋক 2) সাম 3) যজু 4) অথর্ব। ঘুরে ফিরে সেই পৌরাণিক বিষয়। ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের কি এগুলো জানা খুব প্রয়োজন? পাঠকগণ একটু ভেবে দেখবেন। 

৫-পাঁচ এ পঞ্চবাণ। বাণ শব্দের অর্থ বাংলা অভিধানে লেখা আছে, ধনুক থেকে যে তীক্ষ্ণাগ্র অস্ত্র নিক্ষিপ্ত হয়, তির, শর। হিন্দু ধর্ম অনুসারে কামদেব অথবা মদন দেবের পাঁচটি বানের কথা বলা হয়ে থাকে। এই পাঁচটি বাণ হল- ১) সম্মোহন 2) তাপন 3) শোষণ 4) উন্মাদন 5) স্তম্ভন। এখানেও সেই সহজ সরল শিশুর মনে ও বিশ্বাসে ধর্মীয় বিষয় পরিকল্পনা মাফিক  ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে শুরু হয় ধর্মীয় কুসংস্কারের পাঠ। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়, এযাবৎ পৃথিবীতে লড়াই ঝগড়া করে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার সংখ্যাধিক্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে ধর্মের কারনে। তাই ছোট্ট ছোট্ট সহজ সরল শিশুদের লেখাপড়ার হাতেখড়িতেই ধর্মীয় শিক্ষার পাঠ কেন?

৬- ছয়-এ ঋতু। আমরা যারা ভূগোল বই পড়েছি,তারা সময় জানি যে, গোটা বছরকে ছয়টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। এই ছয়টি ঋতু হল- 1) গ্রীষ্ম 2) বর্ষা 3) শরৎ 4) হেমন্ত 5) শীত 6) বসন্ত। এটা সত্যি। এটা মানতে কারো অসুবিধা নেই।

৭- সাত-এ সমুদ্র। বাংলা অভিধানে সমুদ্র শব্দের অর্থ দেওয়া আছে-সাগর, অর্ণব, দরিয়া, জলধি, বারিধি, অম্বুনিধি, প্রচেতা, জলেন্দ্র, জলেশ্বর, জলারণ্য, জলধর, নীলাম্বু, মকরালয়, মকরাকর, নীরধি, পয়োধি, জলাধিপ,  বারিধর, বারিনিধি, বারীন্দ্র, বারীশ প্রভৃতি। 

এখানে সাত-এ সমুদ্র বলতে সাতটি সমুদ্র বা সাগরের কথা বলা হয়েছে। এই সাতটি সমুদ্র কোথায় অবস্থিত? বিভিন্ন দেশের ভূগোল বইয়ে খোঁজ করলে দেখা যাবে। মহাসাগর আছে, সাগর আছে ,উপসাগর আছে। কিন্তু কোনোটিই সংখ্যায় সাতটি নয়।এই পৃথিবীতে সমুদ্র বা সাগরের সংখ্যা মোট সাতটি নয়। আরো বেশি। উইকিপিডিয়া অনুসন্ধান করলে অনেক সাগর বা সমুদ্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। যেমন-

লোহিত সাগর, বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর, তিমুর সাগর, জাপান সাগর, দক্ষিণ চীন সাগর, জাভা সাগর, মৃত সাগর, বেরিং সাগর, কৃষ্ণ সাগর প্রভৃতি। কিন্তু সাত-এ সমুদ্র এগুলো নয়।


সাত-এ সমুদ্র হল,আমাদের দেশের পুরাণে বর্ণিত সাতটি সমুদ্রের নাম। এগুলি হল – লবণ, ইক্ষুরস, সুরা, ঘৃত, দধি, ক্ষীর ও মিষ্টি 

হ্যাঁ। এগুলিকেই সমুদ্র বলে মানতে হবে। শিখতে হবে। বাচ্চাদের শেখাতে হবে। আচ্ছা, শিশুদের  সংখ্যামালা  শেখার সাথে সাথে  এই ভুল ধ্যান ধারণা গুলি কেন শিখতে হবে? সচেতন পাঠকদের এটাও ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।


৮ - আটে অষ্টবসু। অষ্ট বসু মানে আট জন বসুর কথা বলা হয়েছে। মহাভারত অনুযায়ী দক্ষ রাজার কন্যা বসুর গর্ভজাত আটপুত্রকে বলা হয় অষ্টবসু। তাঁরা হলেন- 1) ধর 2) ধ্রুব 3) সোম 4) অহ 5) অনিল 6) অনল 7) প্রত্যুষ 8) প্রভাস বা দ্যু। বলা হয় এই অষ্টবসুরাই ইন্দ্রের সহকারী, পরবর্তীতে তারা বিষ্ণুর সহকারী হন।

অষ্টবসুর এক বসু প্রভাস বা দ্যু যিনি মাতা গঙ্গা ও শান্তনুর পুত্র রূপে দেবব্রত নামে মর্ত্যে জন্মগ্ৰহণ করেন। পরে তার ভীষণ প্রতিজ্ঞার কারণে ভীষ্ম নামে পরিচিত হন‌।


বৃহদারন্যক পুরাণ অনুযায়ী অষ্ট বসু হচ্ছে- 1) পৃথিবী 2) অগ্নি 3) বায়ু 4)অন্তরীক্ষ 5) আদিত্য 6) চন্দ্রমা 7) নক্ষত্রাণি 8) দ্যু।

এখানেও সেই বির্তকিত বিষয়ের অবতারণা। একটার সাথে একটার কোনও মিল নেই! তবুও শিখতে হবে।পড়তে হবে। শিশুদের শেখাতে হবে! কিন্তু কেন?

৯- নয়-এ নবগ্রহ। নবগ্রহ মানে নয়টি গ্রহ। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে নয়টিগ্রহের কথা বলা হয়েছে। সেগুলি হল রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু।

এখানে রবি অর্থাৎ সূর্যকে পুরানে গ্রহ বলা হয়েছে। কিন্তু রবি তো একটি নক্ষত্র। আমরা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে শিশুদের ভুল শিক্ষা দিচ্ছি। তাছাড়া রাহু ও কেতু নামে  কোনো গ্রহের  অস্তিত্ব এই সৌরজগতে নেই। তবুও আমরা নয়টি গ্রহের মধ্যে রাহু কেতুকে রেখেছি। কারন পুরানে আছে। তাই রাহু, কেতু কে গ্রহ বলেই মানতে হবে। পড়তে হবে। শিখতে হবে।বাচ্চাদের শেখাতে হবে। কিন্তু কেন?

হিন্দু ধর্মের পুরাণ অনুসারে, "সমুদ্র মন্থনের সময় রাহু (স্বরভানু) নামক এক অসুর লুকিয়ে দিব্য অমৃতের কয়েক ফোঁটা পান করে। সূর্য্য ও চন্দ্রদেব তাকে চিনতে পেরে মোহিনী অবতাররূপী ভগবান বিষ্ণুকে জানায়। তৎক্ষণাৎ, অমৃত গলাধঃকরণের পূর্বেই বিষ্ণু আপন সুদর্শন চক্রের মাধ্যমে রাহুর ধড় থেকে মুন্ড ছিন্ন করে দেন। অমৃত পানের জন্য মুন্ডটি অমরত্ব লাভ করে এবং এভাবেই রাহু গ্রহটির উৎপত্তি হয়; (এই ভাবে কি কোনো গ্রহের জন্ম হতে পারে?) বাকী মুন্ডহীন দেহটির নাম হয় কেতু। সূর্য্য ও চন্দ্রের প্রতি বিদ্বেষের কারণে বছরের নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাহু এদেরকে গ্রাস (গ্রহণ) করে ফেলে। কিন্তু এই গ্রহণের পর সূর্য্য ও চন্দ্র রাহুর কাটা গ্রীবা থেকে আবার বেরিয়ে আসে। এই ভাবেই সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ হয়” যা একটি অবৈজ্ঞানিক মতবাদ। 


আমরা ভূগোল বইয়ে পড়েছি সৌরমণ্ডলের কথা।সৌরমন্ডলে যে নয়টিগ্রহের নাম রয়েছে সেগুলি হল – বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো। যদিও তার মধ্যে বর্তমানে প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্লুটোকে বলা হয় বামন গ্রহ। ভেবে দেখুন, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানের  অভূতপূর্ব উন্নতির পরও আমরা কি পৌরাণিক গালগল্প গুলো মানব না বিজ্ঞান মানব! বাচ্চাদের স্বার্থে এ কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার 

১০-দশ-এ দিক। দশটি দিকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই দশটি নাম  হল পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, উর্ধ এবং অধঃ। এটা সত্যি। তাই এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। 

সময়ের সাথে বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে চলায় বুদ্ধিমানের কাজ। পরিশেষে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি রূপক কবিতার কয়েকটি লাইন নিম্নে উদ্ধৃতি করে এই লেখা শেষ করছি।

“যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে

সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে;

যে জাতি জীবনহারা অচল অসাড়

পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।”


ঋণ স্বীকার:

সংসদ বাংলা অভিধান।

বাংলা অভিধান।

কয়েকটি পুরাণ গ্রন্থ।

উইকিপিডিয়া।

দুঃখিনী -
জামাল আনসারী
Nov. 16, 2024 | অনুগল্প | views:499 | likes:5 | share: 5 | comments:0

আজন্ম দুঃখিনী সীতাদেবী তার একমাত্র গর্ভজাত পুত্র সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেছে। কিন্তু লেখাপড়া শিখলেই তো আর  সকলেই শিক্ষিত হয়না! কেউ কেউ শিক্ষিত না হয়ে গর্দভও হয়। বিশ্বভুবন তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও বোধহয়  সিতাদেবীর একমাত্র ছেলে চিরঞ্জিতের মতো দ্বিতীয় গর্দভ এর  সন্ধান পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ?


ভালোবাসা মানুষকে যেমন আপন করে নেয়, তেমনি কখনও কখনও ভালোবাসা কাউকে কাউকে অন্ধ করেও দেয়। চিরঞ্জিত গ্রামেই এক সহপাঠীকে ভালোবেসে একদিন হঠাৎ বুড়ো মাকে একলা বাড়িতে ফেলে  নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।সেই দিন থেকে দীর্ঘ কুড়িটি বসন্ত সীতাদেবীর একমাত্র ছেলের পদশব্দটুকু একটিবারের মতো কান পেতে শোনায় জন্য অধীর আগ্রহে,প্রতিটি মুহূর্ত কাটে। অপেক্ষায় তীর্থের কাকের মতো মাটির কুঁড়ে ঘরে পথ চেয়ে বসে থাকে। কিন্তু বসে বসে থাকলে তো আর দিন চলে না। যা কিছু বিষয় আশয় ছিল বিক্রি করে কোনও কর্মে দিনপাত চলে। তাছাড়া এতদিন ধরে গ্রামের পাড়া প্রতিবেশীরা দয়া বশত যথা সাধ্য সাহায্য সহযোগিতা করেছে।এই পরনির্ভরশীল জীবন সীতাদেবীর আর ভালো লাগে না।তাই একদিন সে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়, আর গ্রামে থাকবে না। কিন্তু যাবে কোথায়? শরীরে আর তো সেই আগের মতো তেজ নেই। সে ভাবে,গ্রাম ছেড়ে বহুদূরে ভিক্ষা করে খাবে! তবুও গ্রামে আর থাকবে না।


একদিন রাত্রে হঠাৎ পাড়া প্রতিবেশীকে না জানিয়েই পরনের শতছিন্ন শাড়িটি পরেই সত্তর বছরের রুগ্ন জীর্ণ শরীরটাকে নিয়ে চুপিচুপি জন্মের মতো গৃহের মায়া ত্যাগ করে।গভীর রাত্রে খালি পায়ে হেঁটে এসে এক ষ্টেশনে একটি পেসেঞ্জার ট্রেনে ওঠে।সকালে ঘুম ভাঙ্গলে দেখে এক বিরাট ঝাঁ চকচকে রেল স্টেশনে সে পড়ে আছে। জীবনে কোনোদিন এতবড় ষ্টেশন দেখার সৌভাগ্য সীতাদেবীর হয় নাই। কিন্তু ষ্টেশনটি যতই আধুনিক ঝাঁ চকচকে হোক না কেন, তাতে কি আর দুঃখিনির পেট ভরবে? অগত্যা ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে পাশের দোকানগুলোতে ভিক্ষাবৃত্তি করতে লাগে।


একদিন একটি কাপড়ের দোকানে নতুন নতুন জামা কাপড় পরা পুতুলগুলিকে দেখে অবাক হয়ে ভাবে, যার প্রয়োজন তার দেহের লজ্জা নিবারনের কাপড়টুকু নাই,আর এই পুতুল গুলি? মুহূর্তে নজর পড়ে,দোকানে বিশাল আকারের ফ্লেক্সে বড়বড় অক্ষরে পরিস্কার বাংলায় লেখা" চিরঞ্জিত শাড়ি স্টোর।''  সিতাদেবী তার মলিন কাপড়ের আঁচলে অশ্রু মুছে, অস্ফুট স্বরে বলে,”আমার ছেলের নাম চিরঞ্জিত!"

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929